প্রযুক্তি পণ্যের উৎপাদক ও রপ্তানিকারক দেশ হবে বাংলাদেশ: মোস্তফা জব্বার
ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক
ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের বড় রকমের পরিবর্তনের কথা তুলে ধরে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার জানিয়েছেন, বাংলাদেশকে প্রযুক্তি পণ্যের উৎপাদক ও রপ্তানিকারক দেশে পরিণত করার লক্ষ্য নিয়ে ২০১৫ সাল থেকে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল ভবনে বাংলাদেশ থেকে বিশ্বমানের হার্ডওয়ার রপ্তানি প্রযুক্তি পণ্য উৎপাদন নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, ২০১৫ সালের ৬ অগাস্ট ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের সভার আলোচনা থেকে উঠে আসে ডিজিটাল ডিভাইস আমদানির পরিবর্তে কীভাবে উৎপাদন ও রপ্তানি করা যায়। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে মূলত সেটার ইকোসিস্টেম তৈরির কাজ চলে। ইলেকট্রনিক্সের ক্ষেত্রে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ মার্কেট শেয়ার আমাদের দেশীয় কোম্পানির হাতে আছে। আমাদের শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবের ক্ষেত্রে আমরা বলছি, পণ্যটা মেইড ইন বাংলাদেশ হতে হবে। আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা আইডিসি প্রকাশিত ‘ড্রাইভিং এ ডিজিটাল বাংলাদেশ থ্রু হাই-টেক ম্যানুফ্যাকচারিং’ শীর্ষক প্রতিবেদনে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ বিশ্বমানের হার্ডওয়্যার প্রযুক্তি পণ্য উৎপাদনের কেন্দ্রে পরিণত হতে চলেছে বলে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বতর্মানে দেশে এক দশমিক ১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মোবাইলের বাজার এবং ১৬৫ মিলিয়ন ডলারের ল্যাপটপের বাজার রয়েছে। আর কেবল ২০১৭ সালে বাংলাদেশে ৩৪ মিলিয়ন মোবাইল ফোন আমদানি হয়েছে। ফিচার ফোন দিয়ে যাত্রা শুরু করা বাংলাদেশের অভাবিত সাফল্যের উদাহরণ টেনে মোস্তাফা জব্বার বলেন, এখন মানুষের চাহিদা বহুগুণ বেশি ডেটার দিকে গিয়েছে। সে কারণে ফিচার ফোন থেকে আমরা স্মার্টফোনের দিকে যাব, এটা হচ্ছে সাংঘাতিকভাবে অনিবার্য পরিণতি। এখনো আমাদের স্মার্টফোনের ব্যবহার ৩০ শতাংশের উপরে যায়নি। দুই-চার বছরের মধ্যে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশে পৌঁছাবে। গত ঈদের সময় আন্তর্জাতিক ভয়েস কল প্রায় ২৫ শতাংশ কমার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তার মানে ওই কলগুলো ডাইভার্ট হয়েছে ডেটায়। সেটা ডিভাইস পরিবর্তন ও ভিন্ন কনটেন্ট ব্যবহারের দিকেই ইঙ্গিত করে আমাদের। বাংলাদেশের স্বস্তা শ্রম ও অপারেশনের বিবেচনায় নিলে কেবল অ্যাসেম্বলিংয়ের মাধ্যমে ‘এক বিলিয়ন ডলার অর্থ দেশে রাখা সম্ভব’ বলে মন্তব্য করেন ‘লিভারেজিং আইসিটি ফর গ্রোথ, এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড গভর্নেন্স (এলআইসিটি) প্রকল্পের দলনেতা সামি আহমেদ। এক্ষেত্রে ওয়ালটন, সিম্ফনি, আমরা কোম্পানিস, স্যামসাং এবং ট্রান্সিশন হোল্ডিংসের যন্ত্রাংশ ইতোমধ্যে বাংলাদেশে সংযোজনের কথা তুলে ধরা হয় ওই আইডিসির প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বোস্টন কনসালটিং গ্রুপের (বিসিজি) কুয়ালালামপুর অফিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জারিফ মুনির বলেন, বাংলাদেশকে উৎপাদন ও রপ্তানির কেন্দ্রে পরিণত করতে সহায়ক নীতিমালা প্রণয়ন করা দরকার। এর মাধ্যমে সরকারের পাঁচ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি লক্ষ্য অর্জন সহায়ক হবে। সংবাদ সম্মেলনে বিসিজির গ্লোবাল চেয়ারম্যান ড. হ্যান্সপল বার্কনার বলেন, পূর্ব এশিয়ায় উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি এবং বাণিজ্যিক বিরোধের কারণে এখন কোম্পানিগুলো বহুমুখী হতে চায়। ভিয়েতনামের কথা আসছে। আমরা বড় আকারের উৎপাদন কারখানা করার বিষয়টি সেখানে দেখেছি। নানামুখী কোম্পানির জন্য ইকোসিস্টেম তৈরি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ একটি প্লান্ট দিয়ে হবে না। বিভিন্ন ধরনের পণ্য উৎপাদনের পরিবেশ নিশ্চিতকরণ এবং সংযোজনের সুবিধা দেওয়া দরকার। সেটা করতে পারলে বাণিজ্যিক বিরোধের কারণে কোম্পানিগুলো এইমুখী হবে। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম বলেন, আর্থিক সক্ষমতা মানুষ বাড়ায় মোবাইল ও ল্যাপটপের মত ডিভাইস ব্যবহার করবে। এখানে প্রবৃদ্ধিটা স্পষ্ট। বাংলাদেশ এখন ‘ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনের’ দিকে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। উৎপাদন ও রপ্তানির ক্ষেত্রে কোন দেশ কীভাবে শুরু করেছে, সেটা নির্ভর করতে সেদেশের উপর। আপনার স্টান্ডার্ড কেমন আছে, আপনি কেমন সক্ষমতা দেখাতে পারেন সেটা গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে নীতিগত কিছু পরিবর্তনসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থাকে সহায়তা দিতে হবে এবং তাদের মধ্যে সমন্বয়ও করতে হবে বলে মন্তব্য করেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান।